ধর্ম

আজ ভাইফোঁটা, ভাইয়ের কপালে বোনের ফোঁটা দেওয়ার শুভ দিন

Posted on October 23, 2025 • 0 Views

আজ ভাইফোঁটা, ভাইয়ের কপালে বোনের ফোঁটা দেওয়ার শুভ দিন
তাপস কুমার নন্দী

‎ভাইফোঁটার দিন বোনেরা তাদের ভাইদের কপালে চন্দন-কাজল- দইয়ের ফোঁটা পরিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে তাঁদের মঙ্গল কামনা করেন। এটি ভাই-বোনের অটুট বন্ধনের কামনায় পালিত একটি পবিত্র উৎসব।

‎বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। কালীপুজো শেষ হতেই শুরু হয়ে যায় ভাইফোঁটার প্রস্তুতি। ভাইফোঁটার দিন বোনেরা তাদের ভাইদের কপালে চন্দন-কাজল- দইয়ের ফোঁটা পরিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে তাঁদের মঙ্গল কামনা করেন। এটি ভাই-বোনের অটুট বন্ধনের কামনায় পালিত একটি পবিত্র উৎসব।

‎ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনায় -

‎ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনার উদ্দেশ্যে বোনেরা এই রীতি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। মূলত কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে বাঙালির ঘরে ঘরে অনুষ্ঠিত হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা। তবে অনেক বাড়িতে রয়েছে কিছু নিয়মভেদ। তাই এটি শুক্লপক্ষের প্রতিপদের দিনও বহু জায়গায় উদযাপিত হয় ভাইফোঁটা।

‎যমদ্বিতীয়া --

‎ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উৎসবকে আবার যমদ্বিতীয়াও বলে। কথিত আছে, এদিন মৃত্যুর দেবতা যম, তার ব যমুনার হাতে ফোঁটা নিয়েছিলেন। অন্যদিকে প্রচলিত আছে আরও একটি লোককথা। শোনা যায়, নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর কৃষ্ণ তার বোন সুভদ্রার কাছে যখন এসেছিলেন, তখন সুভদ্রা তার কপালে ফোঁটা দিয়ে তাকে মিষ্টি খেতে দেন। এরপর থেকেই ভাইফোঁটা উৎসবের সূচনা হয়।

‎ভাইফোঁটার মন্ত্র-

‎"দ্বিতীয়ায় দিয়া ফোঁটা, তৃতীয়ায় দিয়া নিতা,
‎যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা,
‎ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।"

‎ভাইফোঁটায় কী কী লাগে?---

‎মূলত তিনটি জিনিসের ফোঁটা দেওয়া হয়। বিশ্বাস করা হয়, কপালে চন্দনের টিপ মাথা ঠান্ডা রাখে। সেই সঙ্গে রয়েছে এর আরও গুণ। একাগ্রতা বাড়ানো, মন শান্ত করার পাশাপাশি ধৈর্য শক্তি বাড়ায় চন্দনের টিপ। বিভিন্ন হিন্দু অনুষ্ঠানে দেখা যায়, ভক্তদের কপালে চন্দনের টিপ বা তিলক। আসলে এর ফলে ঈশ্বরের প্রতি মন নিবিষ্ট রাখা যায়। চন্দনের এই গুণের জন্যই প্রাচীনকালে মুনি- ঋষিরা কপালে তিলক আঁকতেন।

‎চন্দনের মতো দইয়ের রয়েছে বহু গুণ। হিন্দু ধর্মে দইকে শুভ বলে মনে করা হয়। এজন্যে যে কোনও শুভ কাজে দই উপহার দেওয়া হয়। আর এজন্যেই ভাইফোঁটায় অনেকেই দইয়ের ফোঁটা দেন ভাইদের। বিশ্বাস করা হয় কাজল নজর কাটায়। তাই কু-নজর থেকে আদরের ভাইকে রক্ষা করতেই কাজলের ফোঁটা দেওয়া হয় তার কপালে।

‎ভাইফোঁটা দিক --

‎জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, ফোঁটা দেওয়ার শুভ সময় মেনে চলা ছাড়াও, বোনদের তাদের ভাই- দাদাদের মঙ্গল কামনায় আরও কিছু জিনিসের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। কালো জামাকাপড় পরে ভাইফোঁটা দেওয়া উচিত না। এছাড়াও, খেয়াল রাখুন আরও বিশেষ কিছু বিষয়ের। ফোঁটা দেওয়ার সময় ভাইয়ের মুখ যেন উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিকে হয় এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বোনের মুখ উত্তর-পূর্ব বা পূর্ব দিকে হওয়া উচিত।

‎এই উৎসব বাঙালিদের কাছে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা নামে পরিচিত হলেও, বিশ্বের অন্যান্য স্থানে এর রয়েছে ভিন্ন নাম। যা-ই, জয় হোক ভাইফোঁটা উৎসব। পৃথিবীর সকল বোনেরা নিরাপদে থাকুক,শান্তিতে থাকুক,স্বস্তিতে থাকুক।ভাই -বোনের সম্পর্ক চিরকালই মধুময় হয়ে থাকুক-এই প্রত্যাশা।
ফটোকার্ড

Share this post